ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বিয়ের মাত্র আট দিনের মাথায় স্ত্রীর হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন স্বামী মেহেদী হাসান (২৭)। পৌর শহরের মসজিদপাড়ায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নিহত মেহেদী হাসান মৃত জলফু মিয়ার ছেলে এবং মসজিদপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন।
শনিবার (১৭ মে) ভোরে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় পুলিশ স্ত্রী জান্নাত আক্তারকে (১৮) আটক করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জান্নাত স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
নিহত মেহেদীর পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায়। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে মাকে নিয়ে আখাউড়ার মসজিদপাড়ায় বসবাস করছিলেন। নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ মে পারিবারিকভাবে মেহেদী হাসানের সঙ্গে মসজিদপাড়ার আল আমিনের মেয়ে জান্নাত আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের আট দিনের মাথায় ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মেহেদী হাসান রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোরে জান্নাত বাড়ির মালিককে ডেকে জানান যে, তার স্বামী অসুস্থ। বাড়ির মালিক ও স্থানীয়রা গিয়ে মেহেদীকে ঘরের মেঝেতে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। দ্রুত তাকে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিয়ের আগ থেকেই জান্নাত আক্তারের অন্য এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরও সেই সম্পর্ক অব্যাহত থাকায় তিনি স্বামীকে মেনে নিতে পারেননি। এই প্রেমঘটিত কারণেই স্বামীকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার।
মেহেদীর মা বকুল বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আট দিন হলো ছেলের বিয়ে দিয়েছি। বউয়ের আগেও প্রেম ছিল। সে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি ছেলের হত্যার বিচার চাই, সরকারের কাছে তার ফাঁসি চাই।’
নিহতের বড় ভাই আবুল কালাম বলেন, ‘আমার ছোট ভাই একটি ওষুধের দোকানে চাকরি করত। সে খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। তার স্ত্রী ৬টি ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে অচেতন করে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করেছে। শুনেছি তার অন্য ছেলের সঙ্গে প্রেম ছিল।’
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ছমিউদ্দিন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জান্নাত আক্তার স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। বিয়ের আগে থেকেই তার এক যুবকের সঙ্গে প্রেম ছিল এবং সে স্বামীকে মেনে নিতে পারছিল না। গত রাতে সে স্বামীকে বলে ঘুম আসছে না, তাই ঘুমের ওষুধ আনতে পাঠায়। পরে কোকের সঙ্গে ৬টি ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে অচেতন করে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে।’
পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি
Leave a Reply